স্বদেশ ডেস্ক:
সাত মাসের অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন এক মা। শিশুটিকে আপন করে নিতে কয়েকজন এগিয়ে এলেও বাদ সেধেছে তার প্রতিবন্ধিতা। আপাতত তাদের কেউ কেউ চিকিৎসার খরচ মেটাচ্ছেন।
তবে অবুঝ শিশুটির দেখভাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের চতুর্থ তলায় শিশু বিভাগের আট নম্বর বেডে গেলেই দেখা মিলবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার শিশুকন্যা জিমের।
সাত মাস বয়সী শিশুটির পাশে আপন বলতে কেউ নেই। ২২ দিন আগে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে সবার অগোচরেই নিরুদ্দেশ হন তার হতদরিদ্র মা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জিমকে ভর্তি করা হয় গত ২৫ জুন।
বাবার নাম আবুল ও ঠিকানা নয়ারহাট ছাড়া আর কোনো তথ্যই দেননি তার ‘মা’। হাসপাতালে ভর্তির সব নিয়ম শেষ হওয়ার আগেই মেয়েকে বেডে রেখে সুযোগ বুঝে বেরিয়ে যান তিনি। এখন মানবতার দূত হিসেবে হাজির হয়েছেন হাসপাতালটির নার্স, আয়া ও চিকিৎসকরা।
অবুঝ জিমের চাহনি আর মায়া জড়ানো হাসিতে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হযেছে শিশু বিভাগে। যার যখন ডিউটি, তখন সে-ই আগলে রাখেন শিশুটিকে। মা-হারা শিশুটিকে একনজর দেখতে উঁকি দেন হাসপাতালে ভর্তি অন্য শিশুদের মায়েরাও। কেউ কেউ দিয়ে যান খাবারও।
তবে এত কিছুর মধ্যেও শিশুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়েই শঙ্কা। হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ বেগম নুরজাহান জানান, আপন মা ফেলে গেলেও এখন তারাই আপন করে নিয়েছেন শিশু জিমকে। হাসপাতালে ওর খাওয়া-দাওয়া, গোসল সবই করান আয়া গোলবানু।
নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসলেও দরিদ্রতার কারণে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার সাধ্য যে তার নেই। এ বিষয়ে গোলবানু বলেন, ‘এ কয়দিনে মেয়েটার ওপর মায়া জন্মে গেছে। কেউ ওকে নিয়ে গেলে খুব খারাপ লাগবে। আবার ওর দায়িত্ব নেওয়া তো আমার পক্ষে সম্ভব না।’
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মাহবুব জোবায়ের জানান, শিশুটি নিউমোনিয়া ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। চিকিৎসার মাধ্যমে নিউমোনিয়া থেকে মুক্তি মিললেও সেরিব্রাল পালসির জন্য আজীবন ফিজিওথেরাপির দরকার হয়।
শিশুটির বিভিন্ন অঙ্গে জড়তা রয়েছে, হাত-পায়ের সন্ধিস্থলগুলো শক্ত। এ কারণে সে ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না। ঘাড় থেকে সমস্যা উৎপত্তি হওয়ায় হয়তো ভবিষ্যতে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সে।
ঘাড় সব সময় নিচের দিকে হেলে থাকবে। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যারা এর আগে বাচ্চা নেওয়ার জন্য আবেদন করে রেখেছিলেন।
কিন্তু প্রতিবন্ধী এ শিশুটিকে তাদের কেউ দত্তক নিতে চাচ্ছে না।’